ইতিহাসঃ
হযরত শাহজালাল (রঃ) সিলেটের একজন প্রমিনেন্ট ইসলামিক আলেম ও সুফি ছিলেন। তার মাজার সিলেট শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান ছিল। তার শিষ্যগণ তাকে বড় পীর হিসেবে পরিচিত করতেন এবং তাকে মহান পীর মন্নান করতেন। তার মৃত্যুর পর, তার মাজার একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় স্থান হয়ে উঠে এবং ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিলেটের ইতিহাসে, হযরত শাহজালাল (রঃ) এবং তার সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে, এবং এই ঘটনার ফলে সিলেট একটি মহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে, যা “৩৬০ আউলিয়ার দেশ” হিসেবে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানে বড় পীরের প্রতি আগ্রহ এবং আত্মানুরাগ বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, এবং সালাম প্রেরণা করা এবং দোয়া করা হয় হয়ে তার মহান মহিমা বাড়ানোর জন্য এবং মানুষের সমস্যা ও দু: খ দূর করার জন্য। এই সম্প্রদায়ের অনুযায়ী, হযরত শাহজালাল (রঃ) এবং তার সান্নিদ্য সিলেটে ধর্মীয় এবং সামাজিক কর্মে নিযুক্ত হন, এবং তাদের আচরণ এবং শিক্ষা সিলেটের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তার মাজার সিলেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং পর্যটন স্থান হয়ে উঠেছে, এবং বড় পীরের জনপ্রিয়তা এবং আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে।
কি কি দেখবেন?
আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল:
হযরত শাহজালাল (র.) আসার পূর্বে প্রাচ্যদেশে তার মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (র.) তাকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’ হযরত শাহজালাল (র.) এই নিদর্শনের অনুসরণ করেন এবং তার শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটির দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, যাত্রাপথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সাথে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। পরে এই শিষ্যের উপাধি হয় চাষণী পীর। সিলেট শহরের গোয়াইপাড়ায় তাঁর মাজার বিদ্যমান। সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হযরত শাহজালাল (র.) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সিলেটে তেল ও গ্যাস পাওয়ায় আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল প্রমাণিত হয়েছে।
গজার মাছ:
হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার চত্বরের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছ খেতে দেয়। পুকুরের পশ্চিম কোণে ছোট মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। পুকুরে অজুর ব্যবস্থাও আছে। ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করা হয়। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। মরে যাওয়া মাছগুলোকে মসজিদের পশ্চিম দিকের গোরস্থানে পুঁতে ফেলা হয়। পুকুরটি মাছ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল (র.) এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোসত্মফার (র.) মাজার থেকে ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শ’তে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়।
জালালী কবুতর ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়া:
হযরত শাহজালাল (র.) এর আধ্যাত্নিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (র.) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। পীতলে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালী কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং জালালী কবুতর নামে পরিচিত। সিলেটে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কেউই এ কবুতর বধ করে না এবং খায় না। বরং অধিবাসীরা এদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে থাকে। শাহজালালের (র.) মাজার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। মাজার কর্তৃপক্ষ এই কবুতরের খাবার সরবরাহ করে থাকেন।
রাজস্বমুক্ত কসবে সিলেট:
হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন কামনাবাসনামুক্ত নির্লোভ সূফি সাধক। কথিত আছে, দিলস্নীর সম্রাট তাঁকে নবাবী প্রদান করে একটি সনদ পাঠান। হযরত শাহজালাল (র.) তা প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, তিনি সংসারবিরাগী ফকির, তাঁর নবাবীর প্রয়োজন নেই। এক পর্যায়ে সম্রাট তাঁকে সিলেটের জায়গীর গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। হযরত শাহজালাল (র.) তাতেও রাজি হননি। শেষে সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি হযরত শাহজালালের (র.) প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে সিলেট শহরকে রাজস্বমুক্ত (কসবে) বলে ঘোষণা দেন। এ কারণে আজো সিলেট শহরের ভূমি রাজস্ব থেকে মুক্ত।
জমজমের কূপ ও ঝরণা:
হযরত শাহজালাল (র.) একটি কূপ খনন করার আদেশ দিয়ে প্রার্থনা করেন আলস্নাহ যেন এই কূপটিকে জমজমের কূপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেন। এরপর তিনি লাঠি দিয়ে মাটির ওপর আঘাত করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে এই কূপটির সাথে জমজমের কূপের মিলন ঘটে গেল। তারপর এর চারপাশ পাকা করে দেওয়া হলো এবং উত্তর পার্শ্বে দুটি পাথর বসিয়ে দেওয়া হলো, যা থেকে দিনরাত পানি প্রবাহিত হয়।
ডেকচি:
মাজারের পূর্ব দিকে একটি ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছেন বলে জানা যায়। মীর মুরাদ ঢাকার হোসেনী দালান তৈরী করেন। যদিও ডেকচিগুলোতে রান্নাবান্না হয় না, তবুও কথিত আছে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ডেকচিগুলোতে প্রচুর টাকাপয়সা দান করেন।
চিলস্নাখানা:
মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রীলঘেরা তারকাখচিত ছোট্ট যে ঘরটি রয়েছে, এটি হযরত শাহজালালের (র.) চিলস্নাখানা। স্থানটি মাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল (র.) এই চিলস্নাখানায় জীবনের ২৩ টি বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।
শাহজালালের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি:
হযরত শাহজালাল (র.) কেবল একজন পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বীর মোজাহিদ। তার ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম, প্লেট এবং বাটি দরশনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। দরগার দক্ষিণ দিকে দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এই পথ দিয়ে অগ্রসর হওয়ার পর বাঁ দিকের বাড়িটি মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের। এই বাড়িতে হযরত শাহজালালের (র.) তলোয়ার ও খড়ম সংরক্ষিত আছে। প্লেট ও বাটি সংরক্ষিত আছে দরগাহ’র মোতওয়ালিস্নর বাড়িতে। এগুলো দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষের ভীড় জমে।
দরগাহ মসজিদ:
বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের মন্ত্রী মজলিশে আতার স্থানটি দরগাহ মসজিদ নামে পরিচিত। সেখানে রয়েছে হযরত শাহজালালের (র.) শ্রদ্ধায় সারা বছর জানেম বিশেষ ইবাদত।
উপরে উল্লিখিত স্থানগুলি হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি, যেগুলি মাজারে আসা দর্শনার্থীরা সম্পর্কে জানতে পারেন। এই স্থানগুলি হযরত শাহজালাল (র.) এবং তার পূর্বপূর্বপূর্ব শিষ্যদের দ্বারা নির্মিত এবং পরিচালিত হচ্ছে, এবং এই স্থানগুলি ধর্মিক এবং সামাজিক গুরুত্বের সাথে জড়িত আছে।
কিভাবে যাবেন?
সিলেট যাওয়ার জন্য সহজ উপায়:
ঢাকা থেকে সিলেট:
- বাসে যাওয়া: ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য বাস সেবা রয়েছে। বাস স্ট্যান্ডগুলি হলো ফকিরাপুল, সায়দাবাদ, মহাখালী। এই স্ট্যান্ডগুলি থেকে সিলেটগামী এসি বাস এবং নন-এসি বাস উপলব্ধ। সিলেটগামী এসি বাসের ভাড়া সাধারণভাবে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা।
- ট্রেনে যাওয়া: সিলেটে যেতে ঢাকা থেকে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যেতে পারেন। অন্যান্য রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেন চেক করতে পারেন, যেসবগুলি সিলেটে যায়, যেমন উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত, কালনী ইত্যাদি।
- আকাশ পথ থেকে যাওয়া: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেটে উড়ে যেতে পারেন। বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, ইউএস বাংলার বিমানগুলি সিলেটে ফ্লাই করে।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট:
- বাসে যাওয়া: চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে যাওয়া সম্ভব। বাস ও ট্রেন দুটি অপশন রয়েছে।
- ট্রেনে যাওয়া: চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে ট্রেনে যেতে পারেন পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন। এই ট্রেনগুলি সপ্তাহে ৬ দিন চলে।
সিলেট থেকে শাহজালাল মাজার:
সিলেট থেকে শাহজালাল মাজারে যাওয়া জন্য সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত উপায় হ’ল:
- সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড হতে সিএনজি, রিকশা বা অটোরিকশা দিয়ে সহজেই মাজারে যাওয়া যায়। রিকশায় গেলে সাধারণভাবে ২০-২৫ টাকা এবং সিএনজিতে গেলে ৮০-১০০ টাকা ভাড়া লাগবে।
আপনার ভ্রমণ সময়ে পর্যাপ্ত সহায়ক তথ্য দেওয়ার জন্য এই মূল্যবান সহায়ক তথ্য সেবা দেওয়া হয়েছে। সাথে আপনি সিলেট থেকে যাওয়া সহজ ও সমৃদ্ধিকরণ পেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
আপনি সিলেটের Ambarkhana Point এর শাহজালাল মাজারের কাছাকাছি এলাকায় থাকতে চান
ঠিকানা: Ambarkhana Point, Shah Kamal Market, Airport Rd, Sylhet 3100
যোগাযোগ নম্বর: +8801322-929424
আপনি এই নাম্বারে কল করে হোটেলে রুম বুক করতে পারেন এবং তাদের প্রাপ্ত সুবিধা এবং দামের বিশদ জানতে পারেন। এই হোটেলে পরিবার সঙ্গে থাকার সুবিধা রয়েছে এবং আপনি অনলাইনে রুম বুকিং করতে পারেন, যা সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী করে।
কি খাবেন?
সিলেটে আপনি যে খাবার খাবেন তা আপনার পছন্দ এবং আপনার আবেগের উপর নির্ভর করতে পারে। এখানে কিছু পরিচিত সিলেটি খাবারের উদাহরণ:
- পিঠা-পুলি: সিলেটে সম্পৃক্ষ্যে পিঠা এবং পুলি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই মিষ্টি স্ন্যাকগুলি আপনি অত্যন্ত সুস্বাদ পেতে পারেন।
- জাল পানি পিঠা: এটি সিলেটের একটি লোকপ্রিয় পিঠা যা গোধূলি পিঠা নামেও পরিচিত।
- বিরিয়ানি: সিলেটে বিরিয়ানি খাওয়া সাধারণ এবং খুবই জনপ্রিয়। আপনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খেতে পারেন।
- ফুচকা এবং চটপটি: যেসব চটপটি এবং ফুচকা আপনি সিলেটে পাবেন, তা আপনার মুখ খোলে আসতে পারে।
- ইলিশ মাছ: ইলিশ সিলেটে খুবই জনপ্রিয় এবং স্থানীয় খাবারের একটি মুখ্য উপাদান। এটি রুই মাছের সাথে তাল্পাট বানানো একটি খাদ্য সেলাদি হতে পারে।
- সিলেটি চা: সিলেট প্রসিদ্ধ চা উৎপাদন কেন্দ্র, এবং সিলেটি চা খাবারের সাথে সাধারণভাবে পরিবেশন হয়।
- ফল স্যালাদ: সিলেটে সার্কুলেশনে থাকা বিভিন্ন ফলের স্যালাদ পাওয়া যায়, যা মুখ পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে।
সিলেটে আরও বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের স্থান রয়েছে, আপনি চাইলে এই স্থানের অন্যান্য খাবার পরিচিত করতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থানঃ
এছাড়া, সিলেটে আপনি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন, যেগুলি সিলেটের সাথে সংক্ষেপে যোগ করা হয়েছে। এই দর্শনীয় স্থানগুলি সিলেটের সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী।